বেশ কয়েক বছর আগে একবার শিল্পী সুলতানের স্মৃতিবিজরীত অপরুপা চিত্রা নদী দেখতে নড়াইল গিয়েছিলা।সেবার চিত্রার সৌন্দর্য আমাকে এতটাই বিমোহিত করেছিল যে! আমি পরেও বেশ কয়েকবার নড়াইল গিয়েছিলাম, শুধু অপরুপা চিত্রার রুপের প্রবল মায়ার টানে।অদূর ভবিষ্যতেও হয়ত আরো বহুবার! অপরুপা চিত্রার রুপের ভালোবাসার টানে, আমাকে নিয়ে যাবে বারেবার শিল্পী সুলতানের স্মৃতিধন্য নড়াইলের পানে।

মূলত নদীর কূলে বেড়ে ওঠার জন্য শৈশবকাল থেকেই নদীর সাথে আমার দারুন সখ্যতা, যা এখন পরিনত হয়েছে ভীষণ দূর্বলতা কিংবা ভালোবাসায়। ছোটবেলা থেকেই যখনি কোন সুন্দর নামের নদীর কথা জেনেছি কিংবা পড়েছি,তখনি সেই নদীটির রুপ দর্শনের জন্য স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি।যার ফলশ্রুুতিতে এ যাবৎ মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজরিত কপোতক্ষ, জীবনানন্দের ধানশিরি, বঙ্গবন্ধুর মধুমতি,পল্লী কবির বাড়ির পাশের কুুুুমার নদী, লালন সাইর কালিগঙ্গা, কুশিয়ারা,ইছামতি,কর্নফূূূলি,সিলেটের সুরমা, খুলনার রুুুপসা, তিস্তা, লন্ডনের টেমস ( থ্যামস) সহ দেশ বিদেশের আরো অসংখ্য নদীর রুুপ দর্শনের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আগামীতে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের কালনী গাঙ দেখার খুব ইচ্ছে আছে।

এবার আসল কথায় আসি!আজ বিকালে বাসার সামনের নতুন ভবনের ছাদে বসে কাজের অগ্রগতি দেখছিলাম। হঠাৎ নজর পড়ল সামনের মৃতপ্রায়! এককালের খরস্রোতা খাকদোন নদীর দিকে।। কিছুক্ষন সময়ের জন্য আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম আমার শৈশবে, কত শত মধুর স্মৃতি এই নদীটাকে ঘিরে!! নদীতে গোসলের অপরাধে মায়ের হাতে ধোলাই খাওয়া ছিল, আমার একপ্রকার নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার। অপরাধ শব্দটি এই কারনে ব্যবহার করলাম যে, খাকদোন কিন্তু তখন এরকম মৃতপ্রায় নদী ছিল না। তখন অনেক স্রোত ছিল খাকদোন নদীতে। এই নদীতে জেলেরা ইলিশ মাছ ধরেছে আমি নিজের চোখেই অনেকবার দেখেছি। পোটকাখালির কাছাকাছি বেশ কয়েকবার শুর/শুশুক (মিস্টি পানির ডলফিন) ও দেখেছি। নদীর দুই পাড় লঞ্চঘাট থেকে পোটকাখালি পর্যন্ত ছিল ছইলা গাছ আর বুনো ফুলগাছে ঠাসা।


একপ্রকার নষ্টালজিয়া থেকেই ছাদ থেকে নেমে রাস্তা পাড় হয়ে চলে গেলাম খাকদোনের পাড়ে। গিয়ে আমার উপলব্দি ছিল নিম্নরুপ…
# ছোট্ট এই মানব জীবনে যতগুলি নদী আমি দেখেছি,তার চেয়ে এখনো কোন অংশেই কম সুন্দর নয়,আমার/ আমাদের শহরের প্রান অপরুপা খাকদোনের।
#লেখা শুরুর নড়াইলের চিত্রা কিংবা উত্তরাঞ্চলের অনান্য নদীর পাড় দখলমুক্ত থাকলেও,শুকনো মৌসুমে পানির অভাবে নদীগুলি একদম শুকিয়ে যায়। অথচ আমাদের জেলা উপকূলবর্তী হওয়ার কার,, আমাদের গোটা বছরই নদীতে পানির কোন সমস্যা নেই বললেই চলে। আমাদের খাকদোনের সমস্যা অপদখল আর পলী পরে ভরাট হয়ে যাওয়া!! যা চাইলেই আমরা সমাধান করতে পারি।
# বাংলাদেশের অনেক এলাকার নদীর চেয়ে এখনও বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে আমাদের অপরুপ খাকদোন নদী।
# আমাদের সকলের সম্মিলীত প্রচেস্টা এবং সচেতনতায় কিছুটা রুপ হারানো খাকদোন, আবারো পেতে পারে সেই আগের রুপ/সেই আগের যৌবন।

আসুন সবাই মিলে এই শহরের প্রান খাকদোন দখলের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই।। নইলে শহরের ভবিষ্যতের কথা নাই বললাম,আমাদের সন্তানদের হয়ত খাকদোন নদী দেখাতে হবে বই এর পাতা খুলে কিংবা খাকদোন নিয়ে গল্প বলতে হবে স্মৃতি হাতরে বেরিয়ে।
লিখেছেন
আরিফ খান